বুকের বাম পাশে : হৃদয়ের এক কোণে তুমি নতুন ভলোবাসার গল্প প্রেম টিকে থাকুক – কিছু পরাম
বুকের বাম পাশে
✨ ভূমিকা
🕊️ অধ্যায় ১
নিঃশব্দে ভেসে থাকা এক ছেলেকে নিয়ে গল্প শুরু হয়
রায়হান—একজন নিঃশব্দ, একা চলা মানুষ।
তার নিজের একটা ঘর আছে, বই আর ক্যানভাসে ভরা।
তার জীবন অনেকটা নদীর মতো—ধীর, গম্ভীর, কিন্তু গভীরে অস্থির ঢেউ।
সকালগুলো তার শুরু হয় জানালার পাশে বসে থাকা এক কাপ চায়ের সাথে।
বাইরে শহর জেগে ওঠে—হর্ন, হাহাকার আর হেঁটে যাওয়া মানুষে ভরা।
আর রায়হান?
সে জানালায় বসে থাকে।
কিছু লেখে না, কিছু আঁকে না। শুধু চুপচাপ ভাবতে থাকে—
“এই হৃদয়টাকে এত ভারী করে তোলে কে?”
তার বুকের বাঁ পাশে যেন প্রতিদিন একটানা একটুখানি টান পড়ে।
“আমি বুঝি না, কেন সেখানে এত শূন্যতা জমে।
আমি শুধু জানি, কেউ ছিল, অথবা এখনো আছে—
বুকের বাম পাশে।”
🌿 অধ্যায় ২
এক মেয়ের চোখে এক পুরোনো গান
ঐশী—ছোট শহরের এক সহজ, গভীরতাময় মেয়ে।
সে সদ্য শহরে এসেছে পড়াশোনার জন্য।
চোখে তার কৌতূহল, কিন্তু মুখে অদ্ভুত রকমের নীরবতা।
প্রথম দেখা হয় তাদের একটা পুরোনো বইয়ের দোকানে।
একটা কবিতার বই নিয়ে দু’জনের হাত একসাথে ছুঁয়ে যায়।
রায়হান তাকিয়ে থাকে তার চোখের দিকে—চোখে ছিল ধ্রুবতারার মতো একটা আলোকরেখা।
ঐশী হেসে বলে,
“তুমি কবিতা পড়ো?”
রায়হান মাথা নাড়ায়।
“পড়ি না… লিখি। মাঝেমাঝে। কিন্তু কাউকে দেখাই না।”
ঐশী হেসে বলে,
“তাহলে তো তুমি বড্ড একা মানুষ।”
রায়হানের ঠোঁটে এক বিনীত হাসি আসে।
“হ্যাঁ, আমি একা নই… আমি একান্ত।”
🌇 অধ্যায় ৩
বাড়তে থাকা দূরত্বে কাছাকাছি হওয়ার গল্প
ঐশী এখন প্রায়ই আসে রায়হানের স্টুডিওতে।
সে দেখে ক্যানভাসে মেয়েদের চোখ আঁকা, বাতাসে ওড়া চুল, নীল ছায়া…
তবে সবচেয়ে বেশি আঁকা থাকে একটি অনুভব—
চাপা ভালোবাসা।
রায়হান ধীরে ধীরে বুঝতে পারে, তার জীবনের সমস্ত নিঃশব্দতা ঐশীর সাথে পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছে।
এক বিকেলে ঐশী বলে,
“তুমি জানো রায়হান, মাঝে মাঝে বুকের বাঁ পাশে কেমন একটা ভারী লাগা অনুভব হয়।”
রায়হান তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
সে কিছু বলে না, শুধু মনের ভেতরে বলে ওঠে—
“তুমিও বুঝতে শুরু করেছো বুঝি,
যাকে মুখে বলা যায় না,
সেই ভালোবাসা শুধু বুকের বাম পাশে টিকিয়ে রাখা যায়।”
💌 অধ্যায় ৪
চিঠি, কিন্তু না বলা শব্দে বাঁধা
রায়হান একদিন চিঠি লিখে, লিখে ফেলে।
“ঐশী,
তুমি আমার সমস্ত নীরবতার উচ্চারণ।
তুমি জানো না,
তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেই আমার বাম পাশের স্পন্দন বদলে যায়।”
চিঠিটা সে দেয় না।
দেয়ালের এক কোণে গুঁজে রাখে।
ঐশী আসে, চুপচাপ কথা বলে, তারপর একদিন বলে ফেলে—
“আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে রায়হান। খুব দ্রুত।”
রায়হান তাকায় তার দিকে।
চোখে জল আসে না। মুখে হাসি থাকে।
“ভালো লাগার চেয়ে ভালো থাকাটা জরুরি, তাই না?”
ঐশী মাথা ঝাঁকায়। তার চোখে লেগে থাকে অনুচ্চারিত কান্না।
🕯️ অধ্যায় ৫
বিদায়, অথচ থেকে যাওয়া
ঐশী চলে যায়।
বিয়ে করে অন্য শহরে চলে যায়।
রায়হান এখন আর ছবি আঁকে না।
সে প্রতিদিন রাতে দেয়ালে তাকায়। যেখানে এখনো গুঁজে রাখা সেই চিঠিটা পড়ে আছে।
অব্যক্ত ভালোবাসার জমানো দলা।
কখনো চিঠি খোলে, কখনো পড়ে, কখনো শুধু স্পর্শ করে—
যেন ঐশীর শেষ ছোঁয়া ওখানেই থেকে গেছে।
“তুমি বলোনি কিছু,
আমিও বলিনি।
তবু আমরা দু’জনেই জেনে গেছি—
ভালোবাসা শব্দে নয়,
বুকের বাম পাশে লেখা থাকে চিরকাল।”
📘 শেষ অধ্যায়
আলোকিত অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুরোনো প্রেম
বছর তিনেক পর ঐশী একদিন আসে রায়হানের প্রদর্শনীতে।
চোখে সেই পুরোনো ছায়া, ঠোঁটে নতুন এক ক্লান্তি।
দেয়ালে ঝুলে থাকা একটা চিত্র তার চোখে পড়ে—
একটি মেয়ে, মুখ ঢাকা চুলে, চোখে একফোঁটা জল, আর বুকের বাঁ পাশে লাল দাগ।
ঐশী জানে, এটা তারই প্রতিচ্ছবি।
সে কিছু বলে না।
রায়হানও না।
তারা শুধু দাঁড়িয়ে থাকে।
দুজনের মাঝখানে পড়ে থাকে পুরোনো এক অনুভব—যেটা কেবল বেঁচে থাকে…
বুকের বাম পাশে।
🎭 উপসংহার
**ভালোবাসা সবসময় প্রেমপত্রে লেখা যায় না।
কিছু ভালোবাসা চুপচাপ দাগ কাটে হৃদয়ে—
কথা ছাড়া, ছোঁয়া ছাড়া…
শুধু অনুভবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন