![]() | ||||||
"তোমার সেই মেহেদি পড়া হাত—
একটি না বলা ভালোবাসার চিঠি"
এমন একটি গল্প যা ছুঁয়ে যাবে বুকের বাম পাশে…
ভূমিকা
ভালোবাসা সবসময় বলার জিনিস নয়।
কখনো সেটা একটি হাতের ছোঁয়া হয়,
যেখানে মেহেদির গন্ধ থেকে যায় অনেক বছর পরও।
কেউ ভালোবেসে কাছে আসে, কেউ ভালোবেসেই দূরে যায়।
এই গল্প—তেমনই একজনকে নিয়ে,
যে হারিয়েছে…
তবু ভুলতে পারেনি…
তোমার সেই মেহেদি পড়া হাত…
মেঘলা বিকেল, স্মৃতির গন্ধ
নবীন চুপচাপ বসে আছে একটা পুরোনো চায়ের দোকানে।
চোখের সামনে রেললাইন চলে গেছে দূর পাহাড়ের দিকে।
বৃষ্টি পড়ছে টিপ টিপ করে, বাতাসে ভেসে আসছে মাটির গন্ধ।
তার হাতে ধরা একটা পুরোনো কাগজ—
একটা চিঠি, একটুখানি ছেঁড়া।
আরেকটা ছবির টুকরো, যেখানে একটা মেয়ের হাত—মেহেদিতে মোড়া, অর্ধেক দেখা যাচ্ছে।
সে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ জলে ভিজে না, কিন্তু ভেতরটা ঠিক ভিজে যায়।
“তোমার সেই মেহেদি পড়া হাত… এখনো চোখ বুজলেই স্পষ্ট দেখি।
ছুঁয়ে ফেললেই হয়তো সব ভেঙে যাবে,
কিন্তু ছুঁতে চাই না…
কারণ স্মৃতি কখনো স্পর্শ করা যায় না।”
প্রথম দেখা—তোমার হাতে রং ছিল
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন নতুন ভর্তি হয়েছে।
সবকিছুই ছিল নতুন—বন্ধু, শহর, ক্লাস, ঘড়ির কাঁটার পেছনে ছোটা।
ক্লাসের প্রথম দিনেই মেয়েটিকে দেখে—
তিথি।
লাল ওড়নায় মোড়া, চোখে বইয়ের ভার, আর হাতে… মেহেদির দাগ।
তিথির মেহেদি ছিল অন্যরকম—চাকচিক্য বা বিয়ের জন্য নয়, বরং ইচ্ছার জন্য।
সে বলেছিল,
“আমি প্রতি বছর নিজেই নিজের হাতে মেহেদি দেই।
তোমরা যেমন ডায়েরিতে লেখো, আমি রং দিয়ে লিখি… নিজের হাতে।”
নবীন অবাক হয়েছিল।
কেউ কি সত্যিই এতটা অনুভব করে নিজের হাতকেই?
কাছাকাছি আসা, না বলা ভালোবাসা
তিথি ও নবীনের মধ্যে বন্ধুত্ব হয় ধীরে ধীরে।
তারা একসাথে ক্লাস করে, বই পড়ে, রেলস্টেশনে বসে কবিতা নিয়ে তর্ক করে।
নবীন বোঝে—সে ভালোবেসে ফেলেছে।
কিন্তু তিথি বুঝে না, বা বোঝার ভান করে।
একবার বৃষ্টির মধ্যে তারা ভিজে হাঁটছিল।
তিথি হঠাৎ হাত বাড়িয়ে নবীনের আঙুল ধরে বলেছিল—
“জানো? আমি যখন কাউকে বিশ্বাস করি, তখন তার হাত ধরেই বুঝি… সে আমার হবে কিনা।”
নবীন জিজ্ঞেস করেছিল,
“আর যদি হাত ছেড়ে দাও?”
তিথি মুচকি হেসেছিল—
“তবে বুঝি, সে আমার ছিল না কোনোদিন…”
চিঠি লিখে রেখে যাই তোমার জন্য
নবীন কখনো তিথিকে কিছু বলেনি।
বলতে পারত না।
সে শুধু লিখত—চিঠি, কবিতা, রঙিন কাগজে অনুভূতির খসড়া।
একটি চিঠি ছিল এমন:
“তিথি,
তোমার মেহেদি পড়া হাত যেন একটা কবিতার মতো—
যার প্রতিটি বাঁকেই আমার নাম লেখা।
আমি জানি, তুমি পড়বে না… তবু লিখে যাই।”
তিথি বুঝতে পারত।
তার চোখে মাঝে মাঝে একধরনের প্রশ্ন থাকত।
কিন্তু সে কখনো কিছু বলেনি।
বললে হয়তো, গল্পটা অন্যরকম হতো।
চলে যাওয়া, না ফেরা
চতুর্থ বর্ষের ঠিক আগেই তিথির পরিবার হঠাৎ ঢাকার বাইরে চলে যায়।
একটা বিয়ের প্রস্তাব আসে, এবং খুব অল্প সময়েই সব হয়ে যায়।
তিথি কিছু বলে না।
শেষদিন শুধু একখানা ছোট্ট কাগজে একটা লাইন লিখে নবীনের হাতে গুঁজে দিয়ে চলে যায়।
“তুমি বলোনি কিছু, আমি শুনিনি কিছু—
তবু বুকের ভেতর জমে থাকল এক না বলা গান।”
অতঃপর স্মৃতি—মেহেদির দাগ শুকিয়ে গেলেও…
নবীন বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে এখন একটা স্কুলে পড়ায়।
কিন্তু মনে মাঝে মাঝে দোলা দিয়ে যায় পুরোনো কথা, পুরোনো বিকেল, তিথির হাতে লাগানো মেহেদির সেই ঘ্রাণ।
রেলস্টেশনে গেলে, বইয়ের দোকানে হাঁটলে—সব জায়গায় তিথির ছায়া দেখে।
সে এখনো সেই চিঠিগুলো রেখে দিয়েছে, একটা লাল খামে।
ছবিটার টুকরোটা এখনো আছে, যেখানে তিথির হাতটা অর্ধেক দেখা যায়।
“তুমি জানো তিথি,
আমি কোনোদিন আর কারও হাতে মেহেদি দেখলে তাকাতে পারি না…
কারণ আমি জানি, আমার জীবনের একমাত্র মেহেদি পড়া হাত—তোমারই ছিল।”
শেষপাতা: তুমি ছিলে… এখনো আছো
বছর কয়েক পর একদিন হঠাৎ তিথিকে দেখে নবীন, একটা মেলায়।
তিথির কোলে একটা ছোট্ট মেয়ে, পাশে দাঁড়িয়ে একজন মানুষ—তিথির স্বামী।
তিথি একবার তাকায় নবীনের দিকে, চেনার ভান করে না।
নবীন শুধু দূর থেকে দাঁড়িয়ে থাকে।
তিথির ডান হাতে এখনো মেহেদি আঁকা… হয়তো মেয়েটির জন্য।
নবীন চুপচাপ বেরিয়ে যায় ভিড়ের মধ্য থেকে।
সেই রাতে সে একটি চিঠি পুড়িয়ে ফেলে… এবং আরেকটি লিখে।
“তোমার সেই মেহেদি পড়া হাত,
আমার জীবনের সবচেয়ে স্পষ্ট কবিতা।
তুমি ছিলে, এখনো আছো…
শুধু, ছুঁতে পারি না আর।”
উপসংহার
সব প্রেমে গল্প হয় না।
কিছু প্রেম শুধু একটা হাতেই লেখা থাকে,
যেমন…
‘তোমার সেই মেহেদি পড়া হাত।’
📢 [কমেন্টে বলুন] – আপনার প্রেমের গল্প কেমন ছিল?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন