স্মৃতি চারণ – ভালেঅবাসার নতুন এক গল্প ভালোবাসার নতুন এক ধারা #হুমায়ূনআহমেদেরউপন্যাস #জনপ্রিয়বাংলাকবিতা #ভালোবাসারগল্প

                                   


 

                               

                                            📖 স্মৃতি চারণ – 

                                                                    

                                       লেখা:  [ দার্শনিক কবি ]                                                           

                                                                        

                                                                                                    

                            

 

 

 

 

বৃষ্টি পড়ছে, কিন্তু জানালার কাঁচে নয়—হাসিবের মনে।
সে জানে, কিছু বৃষ্টি কেবল বাইরে নামে না, কিছু বৃষ্টি ভেতরে জমে… নীরবে।

ঘরের কোণে জমে থাকা পুরোনো খাতা থেকে আজ হঠাৎ একটা পাতার গন্ধ উঠে এল—
যার প্রতিটা শব্দে লুকিয়ে আছে এক অনুপস্থিতা: সিমা।

সিমা ছিলো না রোদ, না ছায়া—
সে ছিলো একটি নিরব বিকেল,
যেখানে শব্দের দরকার হতো না কিছু বলার।

"সব কথা মুখে বলা হয় না,
কিছু কথা চোখ বলে,
আর কিছু স্মৃতি হয়ে চুপচাপ বসে থাকে বুকের ওপরে।"

হাসিবের স্মৃতি আজ থেমে গেছে একটা নির্দিষ্ট বিকেলে—
একবার শেষ বিকেলের রোদের ভেতর সে সিমার দিকে তাকিয়ে বলেছিল,

“তুমি জানো সিমা,
আমি যখন তোমার চোখে তাকাই,
তখন পৃথিবীটা একটু শান্ত হয়ে যায়।
যেন কেউ আর প্রশ্ন করে না—কোথায় যাচ্ছি, কেন বেঁচে আছি।”

সিমা কিছু বলেনি।
তবে তার চোখে এক বিন্দু নীরব কবিতা জ্বলজ্বল করছিল।
সেই কবিতাই এখন হাসিবের বুকের ভিতর আলো দেয়…
অথচ সে কবিতা কেউ আর পড়ে না, কেউ শোনে না।


"একেকজন মানুষ আসে জীবনে,
কোনো নাম দেয় না,
শুধু রেখে যায় কিছু চুপচাপ সন্ধ্যা,
কিছু বৃষ্টির গন্ধ,
আর কয়েকটা না-বলা কথা—
যেগুলো মরে না কখনো।"



সময়টা ছিল শীতকাল।
শহরের রাস্তা তখনো কুয়াশার পেছনে লুকোচুরি খেলত,
আর মানুষ হাঁটত গলা জড়িয়ে রাখা মাফলার আর হালকা বিষণ্ণতা নিয়ে।

হাসিব তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে।
বইয়ের চেয়ে মানুষ বেশি পড়ত, এবং অনুভবের চেয়ে প্রশ্ন কম করত।
সে একা থাকত, তবে একা থাকাকে সে একঘেয়েমি নয়—মেডিটেশন বলত।

সেই সময়েই প্রথম দেখা সিমাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির পেছনের সেই ছোট্ট বারান্দায়।
সে বসেছিল একটা ধবধবে সাদা স্কার্ফে মুখ ঢেকে, একটা পুরোনো কবিতার বই নিয়ে।

হাসিব তাকে চিনত না।
কিন্তু তখনই মনে হয়েছিল—
এই মেয়েটা শব্দের চেয়ে নীরবতাকে বেশি বোঝে।

"কিছু মানুষকে প্রথম দেখাতেই মনে হয়,
তারা যেন বহু জন্মের চেনা—
অথচ মনে পড়েনা কখন, কোথায়, কীভাবে চেনা।"

হাসিব দাঁড়িয়ে ছিল এক কোণে,
আর সিমা চোখ তুলে তাকাল ঠিক তখনই।

তাদের চোখে কোনো কথা হয়নি,
তবে পৃথিবী থেমেছিল—
কিছু মুহূর্তের জন্য, যেন সময় শ্বাস নিতে ভুলে গিয়েছিল।

“তুমি তাকালে—আমি দেখলাম না তোমার মুখ,
আমি দেখলাম তোমার ভেতরের একটি জানালা
যেখানে আলো পড়ে থাকে,
যেখানে কেউ বাসা বাঁধে না, শুধু অপেক্ষা করে।”

সেই দিনের পর, হাসিব প্রতিদিন একই সময়ে সেখানে যেত।
সিমাও আসত—কখনো কবিতার বই নিয়ে, কখনো খালি হাতে।

তারা কেউ কাউকে ডাকত না,
কিন্তু কেউ কাউকে এড়িয়েও যেত না।

"এই যে নীরবতা,
এটাই হয়তো প্রেমের সবচেয়ে প্রথম ভাষা—
যেখানে শব্দ দুর্বল হয়ে পড়ে,
আর চোখ শক্ত হয়ে ওঠে প্রমাণের মতো।"

 

সময়ের মতো সম্পর্কও কখনো কখনো হাঁটে শব্দ ছাড়া।
হাসিব আর সিমার মাঝখানে ঠিক তেমন এক নীরব রাস্তা তৈরি হচ্ছিল—
যেখানে পা ফেললে আওয়াজ হয় না, কিন্তু হৃদয়ে দাগ পড়ে।

তারা এখন প্রতিদিন একে অন্যকে দেখে—
লাইব্রেরির বারান্দা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনের রাস্তা,
কখনো ক্যান্টিনের ভিড়ে সবার চেয়ে আলাদা এক চুপচাপ বসে থাকা।

কথা হয় না তবু—
একটা চোখের হাসি, অথবা খাতার ভাঁজে রেখে যাওয়া কবিতার লাইন
হয়ে ওঠে একরকমের চিঠি।

একদিন সিমা তার পাশে বসে থাকা অবস্থায় বইয়ের ভেতর একটা ছোট্ট কাগজ রেখে যায়।
হাসিব যখন সেটা খুলে দেখে, সেখানে লেখা:

"আমরা কেউ কাউকে জানি না ঠিকঠাক,
কিন্তু তবুও এই জানাশোনার মধ্যে
একরকম নির্ভরতা তৈরি হচ্ছে।
এটা কি ভুল? না সত্যি?"

হাসিব উত্তর দেয় না।
সে শুধু পরের দিন নিজের ডায়েরির একটা পাতা ছিঁড়ে রেখে আসে—

"তুমি যদি ভুলও হও,
আমি ভুলে থাকতে চাই সেই ভুলের ভিতর।
কারণ তোমার পাশে ভুল হয়ে বসে থাকাও
এই জীবনের সবচেয়ে নির্ভুল শান্তি মনে হয়।"

"ভালোবাসা হয়তো কথা চায় না,
ভালোবাসা শুধু একটি জায়গা চায়—
যেখানে দু’জন মানুষ একে অন্যকে ছুঁয়ে না গিয়েও
ছুঁয়ে থাকতে পারে."

এরপর থেকে তাদের নীরবতা আর চুপচাপ দেখা—
সবকিছুই একটু বেশি গভীর হয়।

বৃষ্টির দিনে হাসিব আর সিমা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে থাকে, আলাদা জানালায়।
কিন্তু তারা জানে—এই বৃষ্টি শুধু বাইরেই নয়, তাদের ভেতরেও নেমে এসেছে একধরনের কোমল জোয়ার।



সন্ধ্যা নেমেছে।
আকাশে হালকা রঙ, বাতাসে অচেনা গন্ধ।
হাসিব লাইব্রেরির করিডরে দাঁড়িয়ে ছিল—চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছিল সিমাকে।

আজ সে আসেনি।
প্রথমবার।

একটা অস্থিরতা কাঁপছিল হাসিবের ভেতর।
না দেখা হলেও, কেউ কেউ এত গভীরে গেঁথে যায়—
যেন তাদের অনুপস্থিতিও শরীরের ভেতরে শব্দ তুলে।

পরদিন সে সিমাকে দেখে।
সাদা-ধূসর শাল জড়ানো, চুল এলোমেলো, চোখ লাল।

তাদের মাঝখানে যেন কথার বদলে দাঁড়িয়ে ছিল এক টুকরো অন্ধকার।
আর সেই অন্ধকারের মধ্যে সিমা ফিসফিস করে বলল:

“তুমি কিছু জিজ্ঞেস করো না হাসিব।
আমি কথা কম বলি কারণ… শব্দ আমাকে বিশ্বাস ভেঙে দিতে শিখিয়েছে।”

হাসিব কিছু বলেনি।
শুধু পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছে—
কারণ কিছু কিছু সময় পাশে থাকা-ই সব প্রশ্নের উত্তর।

সেদিন রাতেই সিমা একটি চিঠি দিয়ে যায়—
নির্বাকভাবে, হাসিবের বইয়ের মধ্যে রেখে।


✉️ চিঠিতে লেখা ছিল:

_“আমি চুপ করে থাকি,
কারণ আমার কণ্ঠে এখনো বেঁচে আছে
বাবার গলা চেপে ধরা রাতের সেই চিৎকার।
আমি কথা বলি না,
কারণ বিশ্বাস করেছিলাম এক বন্ধুকে—
সে আমার গল্প সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল বিনিময়ে হাসি কুড়ানোর জন্য।
আমি ভালোবাসতে চাই,
কিন্তু ভালোবাসা মানে কেউ একজন আমাকে ছুঁয়ে দিয়ে চলে যাবে—
সেই ভয়টা এখনো ঘুম ভাঙিয়ে দেয়।

তবু আমি তোমার পাশে বসি,
কারণ তোমার চোখে প্রশ্ন নেই—
আর আমিও খুব ক্লান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে।”_


হাসিব চিঠিটা বুক পকেটে রাখে।
সে জানে, সে কোনোদিন সিমার অতীত বদলাতে পারবে না।
তবে সে পাশে থাকতে পারে—
একটি ঘুমের পাশে, একটি চুপচাপ ভোরের পাশে,
একটি ভাঙা মেয়ের পাশে।

"যারা ভাঙে, তারা বেঁচে থাকে নিঃশব্দে।
যারা বোঝে—তারা পাশে দাঁড়ায় প্রশ্ন ছাড়া।
এই প্রেম নয়, এই—নীরবতার প্রতি শ্রদ্ধা।"

 

 

 

#হুমায়ূনআহমেদেরউপন্যাস  
#জনপ্রিয়বাংলাকবিতা  
#ভালোবাসারগল্প  
#ভালোবাসারছন্দ  
#বিষাদেরকবিতা  
#বাংলাসাহিত্যব্লগ  
#বাংলালেখক  
#নতুনগল্প২০২৫  
#আজকেরকবিতা  
#রাতেরগল্প  
#বাংলাগল্প  
#বাংলাউপন্যাস  
#বাংলাকবিতা  
#প্রেমেরগল্প  
#ছোটগল্প  
#নতুনউপন্যাস  
#দার্শনিকগল্প  
#সাইকোলজিক্যালথ্রিলার  
#রোমান্টিকউপন্যাস  
#হৃদয়ছোঁয়ালেখা  
#সাহিত্যপ্রেমিকদেরজন্য  
 


 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছাদ থেকে ঝরে পড়া চিঠি – পর্ব ১: নীরবতার দিকে লেখা প্রথম চিঠি

প্রেমের পাতা: ভালোবাসা, বিরহ ও হৃদয়ের কাব্য (২০২৫ ব্লগ)" মন ভোলানো একটা গল্প