অচেনা হাওয়া। জীবনে একবার ও কেউ যদি প্রেমে পরে থাকে তাহলে এই গল্পটা তার জন্য
লেখা: দার্শনিক
অচেনার শুরু
হাওয়া কখনো চোখে দেখা যায় না।
তবুও তার ছোঁয়া অনুভব করা যায় —
ঠিক যেমন, মিম অনুভব করে সোহাগকে...
কিন্তু তারা এখন কেউ কারও কাছে নেই।
সোহাগ এক শহরের কোণায় দাঁড়িয়ে, ডায়রির পাতায় নিজের ভেতরের ঝড় লিখে চলে।
মিম, অন্য এক শহরে—নিজের জীবনের ফ্রেমে পুরনো সময়ের কিছু ছেঁড়া স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বাঁচে।
দুজনের মাঝখানে সময়, দূরত্ব, ভুল বোঝাবুঝি —
কিন্তু কিছু কিছু প্রেম থাকে,
যা হারিয়ে গিয়েও ফুরায় না।
বছর তিনেক আগের কথা।
একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছায়াঘেরা করিডোরে প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের।
সোহাগ ছিল চুপচাপ, চিন্তাশীল এক তরুণ।
মিম ছিল প্রাণবন্ত, দার্শনিক কথাবার্তার প্রেমে পড়া এক মেয়ে।
তাদের বন্ধুত্ব, বইয়ের পাতায় পাতায় লেখা হয়ে যেতো।
প্লেটোর দর্শন, রবীন্দ্রনাথের গান, সাদাত হোসেনের গল্প —
সব কিছুতেই মিশে যেতো তারা।
একদিন হঠাৎ সোহাগ বলেছিল,
“তুমি আমার ভাবনার অংশ হয়ে গেছো।
তোমাকে ছাড়া আমার চিন্তা অসম্পূর্ণ।”
মিম হেসে বলেছিল,
“তবে তো আমি তোমার অচেনা হাওয়া —
যে সব সময় পাশে থাকে, কিন্তু ধরা পড়ে না।”
হাওয়ার মতো তুমি আসো,
চুপিচুপি মন ছুঁয়ে যাও।
চোখে নয়, হৃদয়ে দেখি —
তোমায় ছুঁতে গিয়ে হারিয়ে ফেলি।
তবুও জানি, তুমি আছো,
এই নিঃশ্বাসে, এই শূন্যতায়।
সব কিছু সহজ থাকেনা,
ভালোবাসা জটিল হয়ে ওঠে কখনো কখনো।
একদিন হঠাৎ ভুল বোঝাবুঝি।
একটা ফোন না ধরার কারণে শুরু হয় মনোমালিন্য।
মিম ভেবেছিল, সোহাগ আর আগের মতো ভালোবাসে না।
সোহাগ ভেবেছিল, মিম ইচ্ছা করেই দূরে সরে যাচ্ছে।
কথা বন্ধ। দেখা বন্ধ।
শেষবার যখন তারা ক্যাম্পাসে একে অপরকে এড়িয়ে গেল,
তাদের চোখে কেবল নীরব চিৎকার ছিল।
তারপর সময় কেটে গেল।
স্নাতক শেষ হলো। শহর বদল হলো।
একজন ঢাকায়, অন্যজন চট্টগ্রামে।
কিন্তু রাতের পর রাত তারা ঘুমাতে পারতো না।
মিম চুপিচুপি পুরনো মেসেজ পড়তো,
আর সোহাগ ফেসবুকে মিমের প্রোফাইলে ঢুকে তাকিয়ে থাকতো নিঃশব্দে।
একদিন ডায়েরিতে সোহাগ লিখল —
> “ভুল বোঝাবুঝি কখন যে ভালোবাসাকে চুরি করে নেয়,
তা টের পাই না...
কিন্তু হৃদয় বুঝে, সে এখনো আছে কোথাও...”
তোমায় লিখি প্রতিদিন,
নিঃশব্দের চিঠি হয়ে।
ডাকঘর নেই, প্রেরক নেই,
তবু জানি তুমি পড়ে নাও।
ভুলে যেও না আমায়,
কারণ আমি আজও থেমে আছি,
তোমার অপেক্ষায়।
মিম একটা স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে।
তার ছাত্রছাত্রীরা তার হাসির পেছনে লুকোনো বিষাদ বোঝে না।
সোহাগ একটা সাহিত্য ম্যাগাজিনে কাজ নেয়।
সে অন্যদের প্রেমের গল্প সম্পাদনা করে, কিন্তু নিজেরটা অপূর্ণ রেখেই।
একদিন, অনেকদিন পর —
মিম একটা কবিতা প্রকাশ করে নিজের ব্লগে।
শিরোনাম ছিল — “সেই চেনা হাওয়া”।
সোহাগ সেই কবিতা পড়ে কেঁপে ওঠে।
সব শব্দ যেন তার জন্য লেখা।
তাদের পুরনো কথা, পুরনো কফি শপ, সেই ছায়া... সব কিছু ফিরে আসে।
ফিরে এসো, হারিয়ে যেও না,
এই হাওয়ার শহরে একা লাগছে।
তোমার ছায়া এখনো রয়ে গেছে জানালায়,
তুমি ছাড়া সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা।
ভালোবাসা ভুলে যাওয়া যায় না —
তুমি জানো, আমিও জানি।
এক সকালে, মিম একটি নোটিফিকেশন পায় —
"সোহাগ তোমার পোস্টে কমেন্ট করেছেন"
কমেন্টটি ছিল মাত্র ৩টি শব্দ:
> "আমি এখনও আছি..."
মিমের চোখে জল আসে।
সে আর দেরি করে না।
সেই পুরনো কফি শপে গিয়ে বসে।
আর ঠিক তখনই —
একটা দরজা খোলে,
ভেতরে ঢোকে এক চেনা মুখ।
সোহাগ।
চোখে পুরনো সেই অভিমানের ছায়া নেই,
কেবল প্রেমের ছায়া।
মিম উঠে দাঁড়ায়।
তারা দুজন কাছে এসে দাঁড়ায়।
সোহাগ বলে —
"তুমি কি এখনও অচেনা হাওয়া?"
মিম হাসে, আর বলে —
"না, আমি এখন তোমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাস্তব... চিরচেনা হাওয়া।"
---
🔚 শেষ নয়, শুরু
জীবনের কিছু প্রেম কখনো ফুরায় না।
তারা হয়তো হারিয়ে যায়,
কিন্তু একদিন অচেনা হাওয়ার পথ ধরেই ফিরে আসে।
ঠিক যেমন, সোহাগ আর মিম।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন