যে ঘরে আলো জ্বলে না – নীরব ভালোবাসার ছায়ায় লেখা এক গল্প
শহরের পুরনো পাড়াগুলোয় সন্ধ্যা নামে তাড়াতাড়ি।
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকা তামিম দেখে, সেই বাসার জানালাটা আজও খোলা।
ভেতর থেকে আলো আসে না, কিন্তু ছায়া নড়ে।
তামিম ভাবল, “এই মেয়েটার ঘরে আলো কেন জ্বলে না?”
রাইশা প্রতিদিন ঠিক সন্ধ্যা ৭টায় জানালার পাশে বসে থাকে।
চা খায়, চুপ করে।
তার ঘরে আলো নেই, কারণ সে জানে—আলো মানেই চঞ্চলতা, স্পষ্টতা।
সে এখন কেবল ছায়া চায়।
তার দেয়ালগুলো নীল রঙা।
কেউ জানে না, সেই রঙ সে নিজে দেয়নি—সেই রঙ আগে থেকেই ছিল।
তামিম জানে, মেয়েটা কোনো বিপদে আছে।
সে তার ঘরে চিঠি রেখে যেতে চায়, কিন্তু সাহস পায় না।
বরং সে প্রতিদিন কবিতা লিখে—নামহীন, পাঠানো হয় না এমন চিঠির মতো।
একদিন লিখল—
“যে ঘরে আলো জ্বলে না,
সে ঘরে কেউ কি অপেক্ষা করে?”
একদিন সন্ধ্যায় রাইশার ঘরে হঠাৎ করেই আলো জ্বলে ওঠে।
তামিম ছুটে গিয়ে দেখে—দরজা খোলা।
ভেতরে রাইশা নেই।
শুধু টেবিলের ওপর রাখা একটি খোলা ডায়েরি, আর একটি চিঠি:
“আলো জ্বাললাম, কারণ আজ আমি নেই।
কিন্তু কেউ যদি খুঁজতে আসে, যেন দেখে যেতে পারে—এই ঘর একসময় বেঁচে ছিল।
কেউ একজন নীরবে ভালোবেসেছিল, আমিও করেছিলাম...
হয়তো তাই তোমার ছাদে থাকা মুখটা আমার ডায়েরিতে এতটা জায়গা পেয়েছে।”– রাইশা
তামিম ডায়েরি বন্ধ করে জানালার দিকে তাকায়।
আলো এখনো জ্বলছে, কিন্তু ঘরটা শূন্য।
সেই রাতে প্রথমবার, তামিম নিজের ছাদে দাঁড়ায় না।
তুমি চাইলে আমি এখন পুরো উপন্যাসটা সাজিয়ে PDF বানিয়ে দিতে পারি, যেমন করেছিলাম "এক টুকরো গোলাপ"-এর জন্য।
তুমি শুধু বলো:
তামিম প্রতিদিন রাতে একটা করে চিঠি লেখে—অথচ কোনো ঠিকানায় পাঠায় না।
সে চিঠিগুলো জমিয়ে রাখে নিজের ডেস্কের এক ড্রয়ারে।
চিঠির বিষয়বস্তু একটাই—রাইশা।
একদিন চিঠির শেষে সে লিখে ফেলে:
“তুমি হয়তো জানো না, কিন্তু আমি তোমার জানালায় আলো না জ্বলার মানে বুঝি।
আমিও একসময় সেই অন্ধকারেই বাস করতাম।”
বৃষ্টির সন্ধ্যা। রাইশা চা বানাচ্ছিল, হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়।
তামিম ছাদে দাঁড়িয়ে দেখে—এই প্রথম রাইশা ঘরের বাইরে এসে ছাদের কিনারায় দাঁড়িয়েছে।
দুজনে মুখোমুখি, কোনো কথা নেই।
তামিম সাহস করে বলে:
"তোমার ঘরে আজ বৃষ্টির চেয়ে বেশি শব্দ আছে।"
রাইশা তাকায়, হালকা হাসে, কিন্তু কিছু বলে না।
তামিম একদিন কাগজে ছোট করে লিখে:
“তুমি আলো জ্বালো না, ঠিক আছে।
আমি ছাদে জ্বালিয়ে রাখি, যদি কোনোদিন পথ হারাও।”
সে কাগজটা ছোট্ট করে ভাঁজ করে, ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেয়, রাইশার ব্যালকনির দিকে।
রাইশা সেটা কুড়িয়ে নেয়। পড়ে।
কোনো উত্তর দেয় না—কিন্তু রাতে ঘরের জানালায় হালকা আলো জ্বলে।
রাইশার ডায়েরিতে শুধু একটা লাইন:
"আমি তার ছাদে উঠে যেতে চাই।
কিন্তু জানি না, সে নিচে নামবে কিনা।"
একদিন সন্ধ্যায় তামিম নিচে নেমে আসে।
দরজায় কড়া নাড়ে।
কেউ খোলে না।
ঘরে আলো জ্বলছে, কিন্তু ভিতরে কেউ নেই।
টেবিলের ওপর একটা ফাঁকা চা'র কাপ, আর একটা খোলা ডায়েরি—
তাতে লেখা:
"তুমি আমার ঘরের আলো।
আমি শুধু জানতাম, একদিন তুমি কড়া নাড়বে।
আমি আলো জ্বালিয়ে চলে গেলাম—তুমি যদি এসো বুঝবে—এই ঘর তোমার জন্য জ্বলে।"
তামিম যেদিন রাইশার ঘরে এসে খালি ঘর, আলো আর ডায়েরি দেখে ফিরে যায়—
সেদিন থেকেই প্রতিদিন সকালে সে ঘরের দরজায় একটি করে চিঠি রেখে আসে।
প্রায় এক সপ্তাহ পর, এক সকালে, সে দেখে দরজার পাশে একটি সাদা কাগজ—
তাতে মাত্র দুইটি শব্দ:
“আমি ফিরেছি।”
সন্ধ্যায় তামিম ছাদে দাঁড়িয়ে।
সামনের জানালায় হালকা হলুদ আলো জ্বলছে।
সেই আলোয় এক চা'র কাপ রাখা, পাশে রাইশা।
সে তাকায়।
তামিমও।
এই প্রথম মুখে শব্দ হয়:
রাইশা: “তুমি এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে থাকো?”
তামিম (হেসে): “কারণ এখন আলো জ্বলে।”
রাইশার ঘর বদলায় না,
দেয়ালের নীল রঙ বদলায় না,
কিন্তু জানালায় পর্দা সরানো থাকে এখন।
তামিম আর চিঠি লেখে না—
তারা মাঝে মাঝে কথা বলে, ধীরে, এক কাপ চায়ের পাশে বসে।
কেউ কারও প্রেমে পড়ে না,
তারা একজন আরেকজনকে বুঝে ফেলে।
তারা জানে, অন্ধকার থাকবেই,
কিন্তু কেউ একজন পাশে থাকলে আলো না জ্বলেও আলো থাকে।
✨ শেষ লাইন
“যে ঘরে আলো জ্বলে না, এখন সেই ঘরে একজন অপেক্ষা করে।
আর একজনে ছাদে দাঁড়িয়ে আরেকটু কাছাকাছি চলে আসে।
একদিন, তারা একসাথে ঘরের আলো জ্বালাবে—ভেতর থেকে।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন