বৃষ্টির পরের সন্ধ্যা। জিবনে একবার হলেও এই গল্পটা পড়া দরকার
বৃষ্টি থেমে গেছে। ধানমন্ডি লেকের চারপাশে জল জমে থাকা পাথরের পথটা সাদা কুয়াশায় ঢাকা। সন্ধ্যার আলো নিঃশব্দে নেমে আসছে শহরের বুকজুড়ে। এমন এক সন্ধ্যায়, আরিব তার হাতে ধরা পুরনো ডায়েরিটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে হাঁটতে।
আরিব একজন লেখক, শব্দ দিয়ে সে পৃথিবী গড়ে। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে তার কলম থেমে গেছে। হঠাৎ হঠাৎ তার মনে হয়, ভালোবাসা বলে কিছু ছিল না কোনোদিন, ছিল শুধু গল্পের রং।
ঠিক তখনই তার চোখ পড়ে সোহানার দিকে। একটা বেঞ্চে বসে আছে সে। কাঁধে আঁচল ছড়িয়ে, ভিজে চুলে অদ্ভুত এক বিমর্ষতা। আরিব নিজেকে থামাতে পারে না। সে এগিয়ে যায়।
"এই জায়গাটা কি সবসময় এতটা নীরব থাকে?" — সোহানা জিজ্ঞেস করে, চোখ না তুলেই।
আরিব হেসে ওঠে, "সবসময় না... শুধু যখন কেউ অনেক কিছু ভুলে যেতে আসে, তখন।"
সেই সন্ধ্যার পর তাদের দেখা হয় আরও বারবার। লেকের ধারে, চারুকলা ইনস্টিটিউটের চা-দোকানে, কিংবা বইমেলার ভিড়ে। কথায় কথায় আরিব বুঝে যায়, সোহানা যেন একটা ধাঁধার মতন। কখনো খুব হাসিখুশি, কখনো হঠাৎ নিস্তব্ধ।
সোহানা জানায়, সে আঁকে। তার ছবি শুধু ক্যানভাসে নয়, চোখে চোখে কথা বলে।
একদিন, আরিব বলে বসে, "তুমি কি জানো, তোমার চোখে আমি এক রকম গল্প খুঁজে পাই, যেটা আমি নিজেই কখনো লিখতে পারিনি।"
সোহানা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে, "আর আমি তোমার লেখায় সেই জায়গাগুলো খুঁজি, যেগুলো আমি কখনো কাউকে বলতে পারিনি।"
সবকিছু যখন ধীরে ধীরে আলোর দিকে এগোচ্ছে, তখনই এক সন্ধ্যায় সোহানা আরিবকে বলে, "চলো না, আজ তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাই।"
তারা যায় পুরান ঢাকার এক পুরনো বাড়িতে। সেখানেই সোহানা শোনায় তার গল্প।
তিন বছর আগে, এই শহরেই, এক দুর্ঘটনায় সে হারায় তার প্রেমিককে। তখন সে মাত্র বিশ। এরপর জীবনের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে সে। আঁকা আর নীরবতা ছিল তার বাঁচার উপায়।
আরিব চুপ করে শোনে। অনেকক্ষণ পর শুধু বলে, "তবে কি আমি খুব দেরি করে এসেছি?"
সোহানা মাথা নাড়ে, "না। তুমি এসেছো ঠিক বৃষ্টির পর... যখন নতুন কিছু শুরু হতে পারে।"
কিছুদিন সোহানা আরিবের সঙ্গে দেখা বন্ধ রাখে। ফোন ধরে না, মেসেজের জবাব দেয় না।
আরিব তার ডায়েরিতে লেখে:
"যদি ভালোবাসা মানেই অপেক্ষা হয়, তবে আমি বৃষ্টি শেষে প্রতিটা সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে থাকব, সেই বেঞ্চটার সামনে।"
একদিন আবার বৃষ্টি নামে। শহর জুড়ে জল আর নীরবতা। আরিব ঠিক আগের মতোই সেই বেঞ্চে যায়।
তখনই... পিছন থেকে কাঁপা গলায় ভেসে আসে — "তুমি তো বলেছিলে, অপেক্ষা করবে..."
আরিব ফিরে তাকায়। সোহানা দাঁড়িয়ে, চোখ ভিজে, তবুও ঠোঁটে এক চিলতে হাসি।
সে এগিয়ে যায়, হাত ধরে।
"এইবার, কোনো সন্ধ্যা আর একা হবে না।"
উপসংহার:
বৃষ্টির পরে যে সন্ধ্যাটা আসে, সেটা কেবল অন্ধকার আনে না— নিয়ে আসে নতুন শুরুর প্রতিশ্রুতি। ভালোবাসা সবসময় নিখুঁত হয় না, কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা অপেক্ষা করতে জানে।
আর এই গল্প, একটা অপেক্ষার, একটা সন্ধ্যার... আর দুইটা ভাঙা হৃদয়ের নতুন জোড়া লাগার গল্প।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন