প্রিয় পাঠকগন এটা হলো ( ছাদ থেকে ঝরে পড়া চিঠি" ) উপন্যাসের ২ পর্ব
রুহি আর রাফেদ এখন মাঝে মাঝে ছাদে বসে—
কথা হয় খুব কম, কিন্তু চোখে মুখে জমে থাকে অনুচ্চারিত বাক্য।
তবে এই নতুন নীরবতার মাঝেও রাফেদের মনে কেমন একটা অস্থিরতা।
রুহি যেন আছে, তবু পুরোটা নয়।
কিছু লুকানো, কিছু দুঃখ জমে আছে তার কণ্ঠহীনতায়।
একদিন হঠাৎ রুহি বলে ওঠে—
“তুমি কি সবসময় সব লেখা শেষ করো?”
রাফেদ উত্তর দেয় না, শুধু মাথা নাড়ে।
রুহি তখন একখানা পুরোনো খাতা তুলে দেয় তার হাতে।
ভেতরে লেখা:
“এই চিঠিগুলো কখনো ছাদ থেকে ফেলা হয়নি।
কারণ সেগুলো লেখা হয়েছিল আমার একটা পুরোনো বন্ধুর জন্য।
যে হয়তো কখনো বুঝতেই পারেনি, আমি তাকে ভালোবেসেছিলাম।”
🔍 চিঠির ভেতরে কী ছিল?
রাফেদ রাতে খাতা খুলে পড়ে।
চিঠিগুলোর ভাষা অন্যরকম।
প্রথম দিকেরগুলোতে একটা কিশোরী কণ্ঠ, পরে আস্তে আস্তে এক নারীর মতো গভীরতা।
সেইসব চিঠি লেখা হয়েছিল তাহসিন নামে এক ছেলের জন্য।
সে ছিল রুহির শৈশবের বন্ধু, যাকে সে হারিয়েছে... আর কেউ জানে না ঠিক কীভাবে।
শেষ চিঠিতে লেখা:
“তাহসিন, তুমি যদি কোনোদিন ছাদে এসে দাঁড়াও—
আর আমি যদি না থাকি—
তাহলে জেনে নিও, আমি অপেক্ষা করেছিলাম...
প্রতিটি সন্ধ্যায়।”
রাফেদ খাতা বন্ধ করে চুপ করে বসে থাকে।
রুহির প্রতি তার অনুভূতিটা তখনও বদলায়নি,
কিন্তু সে বুঝে যায়—রুহির ভেতরে এখনও একজন হারিয়ে যাওয়া মানুষের ছায়া রয়ে গেছে।
সেই রাতে, ছাদে দাঁড়িয়ে সে আবার একটা নতুন চিঠি লেখে—
এইবার নিজের জন্য, কিন্তু রুহির হাতে দেয় না।
“তুমি যদি আবার হারিয়ে যাও...
আমি এবার খুঁজব।
কারণ আগেরবার আমি শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম।”
রুহি জানালার পাশে বসে থাকে প্রতিদিন।
তবে এখন আর সে একা থাকে না।
কখনো তার পাশে বসে রাফেদ,
কখনো পাশে থাকে চা'র কাপ, দুটো।
তারা গল্প করে, কিন্তু অতীত নিয়ে নয়।
তবে রাফেদের মনে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে—
তাহসিন কি আজও রুহির হৃদয়ের কোনো খালি কোণে বসে আছে?
একদিন বিকেলে রুহি হঠাৎ বলে,
“তাহসিনকে নিয়ে আমার ভেতরে কোনো অভিমান নেই।
আমি বরং ভয় পাই—যদি তুমি একদিন আমার অতীতের জন্য চলে যাও।”
রাফেদ খুব আস্তে উত্তর দেয়:
“যারা চলে যায়, তারা অতীতের হয়।
আমি তো তোমার পাশে আছি—এখন, এই আলোয়।”
🌤️ এক সন্ধ্যায়...
ছাদে হালকা বাতাস, মাথার ওপর অর্ধেক চাঁদ।
রাফেদ রুহিকে বলে:
“তুমি যদি চাও, আমরা আবার চিঠি লিখতে পারি।”
রুহি হেসে বলে, “এইবার তো মুখোমুখি চিঠি লিখা যাবে।”
“না,” রাফেদ বলে, “এইবার তোমার চোখে লিখব, আর তুমি আমার হাতে।”
তারা এক টুকরো কাগজে একসাথে লিখে:
“একটা গল্প, যেটা ছাদের রেলিং পেরিয়ে, খোলা আকাশে উড়ে যাবে—
তবে এবার হারিয়ে যাবে না।”
💡 সম্পর্কের নতুন বাঁক:
রুহি এখন মাঝে মাঝে ফোনে তোলা ছবি পাঠায় রাফেদকে।
একবার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা রোদে ভেজা গাছের ছবি,
আরেকবার দুপুরে রান্নাঘরের জানালার পাশে তার ছায়া।
আর রাফেদ?
সে এখন প্রতিদিন ছাদের একটা কোণায় অপেক্ষা করে,
কিন্তু কোনো চিঠির জন্য নয়—
একটা সঙ্গের জন্য।
রুহি একদিন খাতায় লেখে—
“এই প্রথম আমি নিজের নাম লিখে চিঠি পাঠাতে পারছি।
কারণ এখন ভয় নেই—
কেউ পড়ে ফেললে কি হবে?
সে তো এমন একজন, যে আমার নীরবতাও পড়ে ফেলতে পারে।”
তুমি যদি চাও, আমরা এখান থেকে আরো এগোতে পারি:
-
তারা দুজন একটা ছোট সফরে যায়
-
রুহি সাহস করে নিজের পরিবারকে রাফেদের কথা জানায়
-
বা হঠাৎ করে একটা ঘটনা তাদের পরীক্ষা নেয়
আষাঢ়ের একটা ভেজা বিকেল।
রুহি রাফেদকে হঠাৎ মেসেজ করে—“আজ একটু দেরি করবো। জরুরি একটা কাজে যাচ্ছি। প্লিজ, অপেক্ষা করো না।”
রাফেদ তখন ছাদে দাঁড়িয়ে, হাতে কফির কাপ।
সে বুঝতে পারে, আজকের বিকেলটা চুপচাপ যাবে।কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে যায়...
রুহি ফিরেও না, উত্তরও দেয় না ফোনে।
রাফেদের বুক ধুকপুক করতে থাকে।সে ভাবে—
“রুহির ‘জরুরি কাজ’ কি আবার পুরোনো সম্পর্কের ছায়া?”
“সে কি ফিরতে পারবে এই সম্পর্কের ভেতর?”
“নাকি এবার আমিই শুধু অপেক্ষা করে যাব?”
📞 ফোনটা অবশেষে বাজে
রাত ১১টা।
রাফেদের ফোনে অচেনা এক নাম্বার থেকে কল আসে।
ওপাশে এক নারীকণ্ঠ—
রুহির মা।“আপনি কি রাফেদ?”
“রুহি আপনার কথা বলেনি, কিন্তু আমি জানি আপনি ওর পাশে আছেন।”“রুহি এখন হাসপাতালে। হঠাৎ রাস্তায় গিয়েই মাথা ঘুরে পড়ে যায়।”
রাফেদের গলা শুকিয়ে আসে।
হাসপাতালের ঠিকানা শুনেই সে দৌড় দেয়।
🏥 হাসপাতালের দৃশ্য
রুহি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।
তার মাথায় হালকা ব্যান্ডেজ, মুখে নিস্তেজতা।রাফেদ পাশে বসে।
চোখের পানি আটকাতে পারে না।
সে রুহির হাত ধরে বলে—“তুমি আমাকে ভয় পাও বলে দূরে যাওয়া ঠিক ছিল।
কিন্তু আমি যে এবার ভয় পাচ্ছি—
যদি আবার তুমি না ফেরো।”এক সময় রুহির চোখ খোলে।
ম্লান হাসিতে বলে:“তুমি জানো, আমি ঠিক কোথায় যাচ্ছিলাম?”
“আমি তোমার জন্য একটা পুরোনো চিঠি আনতে গিয়েছিলাম।
যেটা কোনোদিন ছাদ থেকে পড়েনি।
এবার সেটা তোমাকে দিতে চেয়েছিলাম… মুখোমুখি।”
💌 চিঠিটার ভেতরে লেখা ছিল:
“আমি তোমাকে ভয় পাই না।
আমি ভয় পাই, তুমি একদিন চলে যাবে।
কারণ আমি অতীত নিয়ে এসেছি।
কিন্তু তুমি... তুমি আমার আজকের গল্প।”
রাফেদ সেই চিঠিটা পকেটে রেখে বলে:
“তুমি আমাকে দিয়ে দাও।
বাকিটা আমি লিখে শেষ করব।”রুহির চোখে এবার কেবল ক্লান্তি নয়—
আছে বিশ্বাসের আলো।
আকাশ ছিল রোদঝলমলে,
কিন্তু রুহির চোখে ছিল হালকা ক্লান্তি।
রাফেদ জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বলছিলো একটা পুরোনো কবিতা,
যা সে লিখেছিল রুহির জন্য।ঠিক তখনই রুহির ফোন বেজে ওঠে।
একটি নাম —
“তাহসিন আহমেদ”রুহি ঠোঁট কামড়ে ফোনটা হাতে নেয়।
এক মুহূর্ত থেমে থাকে।
তারপর ধীরে উত্তর দেয়:“হ্যালো?”
“রুহি… আমি দেশে ফিরেছি।
ভাবলাম, একবার দেখা করা যায় কি না...
যেভাবে চলে গিয়েছিলাম, সেটা তো ঠিক ছিল না।”রুহি নীরব।
তারপর বলে:“ঠিক ছিল না, তাহসিন।
কিন্তু এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।”
📍 দেখা হয় — শেষবারের মতো
দুপুরবেলা এক পুরোনো ক্যাফেতে দেখা হয় তাহসিন আর রুহির।
তাহসিন আগের মতোই, কিন্তু চোখে একটা অপরাধবোধ।
সে কথা বলে তার অনুপস্থিতির ব্যাখ্যা দেয়, বলে সে হারিয়ে ফেলেছিল নিজেকে।রুহি শুধু হাসে।
“তুমি জানো, আমি এখন আর চিঠি লিখি না।
কারণ যার জন্য লিখি, সে আমার সামনে বসে।”“তাহসিন, আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি… অনেক আগেই।
কিন্তু আমি আর তোমার কাছে নেই।”তাহসিন মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে।
“তুমি কি ভালো আছো?”
“আমি ভালো থেকেছি—একজন নীরব ছাদবাসীর সঙ্গে।
যে আমার নীরবতা পড়তে শিখেছে।”
💙 রুহি ফিরে আসে
রাতে রুহি রাফেদকে বলে কিছু না,
শুধু তার পকেটে একটা ছোট কাগজ গুঁজে দেয়।রাফেদ চমকে দেখে—
কাগজে লেখা:“তুমি আজ আমার বর্তমান।
আর সেইটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় সময়।”রাফেদ চেয়ে থাকে রুহির দিকে।
এবার সে আর কিছু জিজ্ঞেস করে না।
তার হাত এগিয়ে আসে।
রুহি ধরেও রাখে।
“সব ফেলে আসা গল্পই শেষ হয় না,
কিন্তু কিছু গল্প নতুন করে শুরু হতে পারে—
জানালার পাশে, আলো জ্বলা এক ঘরে।”"শেষ চিঠিটা ছাদে পাওয়া যায়নি"
রুহি ও রাফেদের গল্প অনেকটাই শান্ত হয়ে উঠেছিল।
তারা একসাথে হেঁটেছিল—বৃষ্টির ভেতর দিয়ে, সন্ধ্যার ছাদে, একেকটা অনুচ্চারিত ভালোবাসার ভেতর দিয়ে।তাদের "চিঠির সন্ধ্যা" হয়ে উঠেছিল ছোট্ট একটা অভ্যাস।
প্রতিদিন কেউ না কেউ ছাদে একটা কাগজ রেখে যেত।
অচেনা লেখা, পরিচিত ভাষা, মাঝে মাঝে নাম না থাকা শব্দের শরীর।
📜 ৩৮তম সন্ধ্যার চিঠি
সেদিনও রাফেদ ছাদে গিয়ে খুঁজছিল চিঠি।
কিন্তু খোলা রেলিংয়ের পাশে আজ কিছু ছিল না।
সে নিচে ফিরে আসে।
রুহির ফোন বন্ধ। দরজা খোলা। ঘর ফাঁকা।বিছানার পাশে একটা ছোট খাম পড়ে ছিল।
রাফেদ হাতে তুলে নেয়।
💌 চিঠি:
“তুমি তো বলেছিলে, একদিন তুমি শেষ চিঠিটা লেখবে।
কিন্তু আমি জানি, শেষ চিঠি সবসময় আমিই লিখি।
কারণ আমার শেষগুলো কখনও জানিয়ে আসে না।আমি কেবল চাই—তুমি যেন ভুলে না যাও,
আমি একবার সত্যিই ভালোবেসেছিলাম।...ভালো থেকো।
রুহি।”
🖤 তারপর?
রাফেদ ছুটে ছুটে ছাদে যায়।
চারদিকে তাকায়। কেউ নেই।নিচে নেমে আশপাশে খোঁজ করে—
কেউ জানে না রুহি কোথায়।ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়—
একটা সাদা ওড়নায় মুখ ঢাকা মেয়েকে ছাদ থেকে নামতে।
তারপর আর কিছুই না।
🌑 ছাদে ঝরে পড়া চিঠি – শেষ লাইন:
“শেষ চিঠিটা ছাদে পাওয়া যায়নি।
কারণ কেউ কেউ চলে যায়, ঠিক তখন—
যখন আমরা মনে করি, তারা এবার থাকবেই।”
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন