আজ আমি ক্লান্ত - বাবা - বাবাদের কষ্টের গল্প বা আমাদের ভালোবাসা

                                               

 

আজ আমি ক্লান্ত - বাবা - বাবাদের কষ্টের গল্প বা আমাদের ভালোবাসা

 

                                     আজ আমি ক্লান্ত - বাবা 

 

                                       লেখা:  [ দার্শনিক কবি ]

 

ঢাকার টঙ্গি এলাকার এক পুরোনো ব্যস্ত গলির ভিতর একটা একতলা ভাঙাচোরা বাসা। সেখানে এক ভাড়া করা ঘরে থাকেন সাইফুল ইসলাম—৪৫ বছরের একজন গার্মেন্টস কর্মী। বিয়ের পর থেকেই এই এলাকায় সংসার শুরু করেন। স্ত্রী হালিমা বেগম আর একমাত্র মেয়ে আফরোজা। মেয়েটা এবার ক্লাস ফাইভে পড়ে, একটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

সাইফুল ইসলামের জীবনটা ঘড়ির কাটার মতো নির্দিষ্ট—সকাল ছ’টায় ঘুম থেকে ওঠা, অযু করে নামাজ পড়া, তারপর এক কাপ চা খেয়ে বেরিয়ে পড়া। অফিস বলতে সাভারের এক গার্মেন্টস কোম্পানি, যেখানে তিনি 'সাপ্লাই হ্যান্ডলিং' ডিপার্টমেন্টে কাজ করেন। একরকম দিন পার, একরকম মাস পার—কিন্তু জীবন একরকম থাকে না।

গত তিন মাস ধরে অফিসে কোনো বেতন পাচ্ছেন না। কোম্পানি 'ফান্ডিং প্রবলেম'-এর অজুহাতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে, “আগামী মাসে দেবো ভাই, ধৈর্য রাখেন।” কিন্তু বাজারে তো ধৈর্যে চাল কেনা যায় না, মেয়ের স্কুলে ফি জমা দেওয়া যায় না।

এদিকে আফরোজার চোখে স্বপ্ন—সে স্কুলে ক্লাস ফাইভের সবচেয়ে ভালো ছাত্রী। প্রতিদিন সকালে উঠে নিজে বই খোলে, মুখস্থ পড়ে। সাইফুল তার এই আগ্রহ দেখে মন থেকে দোয়া করেন—“হে আল্লাহ, মেয়েটা যেন আমার মতো সীমিত না হয়।”

একদিন বিকেলে, স্কুল থেকে ফিরে মেয়েটা বলল, “বাবা, ক্লাসে সবার নতুন জুতা। আমি পুরোনো জোড়াটা পরে গেলে সবাই হাসে। আমি আর যেতে চাই না।” সাইফুল খানিকক্ষণ চুপ করে থাকে। মেয়েটার চোখে পানি। তার বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
তিনি হাসি দিয়ে বলেন, “আচ্ছা মা, তোকে একটা নতুন জুতা কিনে দেবো, ইনশাআল্লাহ। তুই চিন্তা করিস না।”

কিন্তু হাসি দেওয়া সহজ, পকেটে টাকা থাকা কঠিন।

❝ মুখে যতই হাসি থাকুক, পকেটের শব্দ যদি নীরব হয়, তখন বাবারা রাতের আঁধারে কাঁদে— নীরব প্রার্থনার মতো। ❞

সেই রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন অনেক দেরিতে। সারাদিন কাজ করে কিছু বাড়তি ইনকাম হবার আশায় দুইটা মাল টানার কাজ করেন এক পরিচিত দোকানে। সেখানে একেকটা কার্টুন টেনে দিয়ে পান ২০ টাকা। রাতে যখন বাসায় ফিরলেন, তার পা জোড়া কাঁপছিল, কোমরে ব্যথা। কিন্তু মুখে হাসি। হাতে একটা ছোট প্লাস্টিকের ব্যাগ—তাতে একজোড়া সাধারণ রাবার স্যান্ডেল, ২০ টাকার চিপস আর এক প্যাকেট চিনি।

“এটা তোর পিকনিকের জন্য, মা,” তিনি বললেন।

মেয়েটা আনন্দে প্যাকেট ছুঁয়ে চিৎকার দিয়ে উঠল, “বাবা! তুমি সেরা বাবা!”

সেই রাতে হালিমা বেগম যখন তাকে তেল মালিশ করে দিচ্ছিলেন, বললেন, “তোমার পা দুটো ফুলে গেছে। এভাবে কতদিন চলবে, সাইফুল?”
তিনি বলেন, “যতদিন আল্লাহ চায়। মেয়েটা তো ছোট, তাকে তো মুখ থুবড়ে পড়তে দিতে পারি না।”

হালিমা চুপ করে যান। তিনি জানেন, এই মানুষটার মুখে যতই হাসি থাকুক—তার ভেতরের যন্ত্রণার এক পাহাড় সমান।

❝ যে হাসে সে কাঁদেও, শুধু দেয়ালের পেছনে। হাসিমুখের পেছনে কখনও কখনও একটা ভাঙা স্বপ্ন বসে কাঁদে। ❞

পরদিন সকালে সাইফুল কাজে যেতে পারেন না। শরীর কাঁপে, জ্বর আসে।
হালিমা বলেন, “তুমি আজ যেও না, একটু বিশ্রাম নাও।”
কিন্তু তিনি ওঠে পড়েন।
“না, আজ ম্যানেজার ভাই একটু আসবে, যদি কিছু টাকা হাতে দিত। আজ না গেলে মাসটা শেষ হয়ে যাবে।”
তিনি বেরিয়ে যান, অথচ ভেতরে তার শরীরটাই চাচ্ছিল না।

গার্মেন্টসে গিয়ে শোনেন, ম্যানেজার আসেননি। আর কোনো কাজও নেই। হতাশ হয়ে রাস্তায় বসে পড়েন। সূর্যের আলো তার মুখে পড়ছিল, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছিল, শরীরের ঘাম না, এটা ছিল ভেতরের যন্ত্রণার ফল।
তিনি বলেন, “আল্লাহ, কই যাই? কে দেখবে?”

মাঝরাতে, তিনি মসজিদের এক কোনায় বসেন।
অজু করে সেজদায় যান। কারও চোখে পড়েনি,
কিন্তু তিনি বলছিলেন—
“হে আল্লাহ, আমি চাই না কিছু। শুধু মেয়েটার মুখে যেন হাসি থাকে। ও যেন ছোট ছোট জিনিসের জন্য কাঁদতে না হয়।”
তার কণ্ঠ ভেঙে যাচ্ছিল।
“আমার যদি কোনো দোষ হয়ে থাকে, আমাকে শাস্তি দাও। কিন্তু ওকে যেন আমার মতো হতে না হয়।”

❝ সেজদার চেয়েও সৎ জায়গা নেই, সেখানে এক বাবা শুধু বলে— আমার না হোক, সন্তানের মুখে যেন হাসির আলো থাকে। ❞

সেই রাতে তার স্বপ্নে আসেন তার বাবা—একজন সরল কৃষক ছিলেন।
স্বপ্নে বাবা বললেন,
“তুই মানুষ হোস, এটা তো আমার দোয়া। এখন তোর দোয়ার পালা।”
সাইফুল উঠে কাঁদতে থাকেন।
পাশে ঘুমিয়ে থাকা মেয়ের মুখে হাত বুলিয়ে বলেন,
“আমি তোকে মানুষ বানাব, মা।
আমার যদি রক্ত দিতে হয়, দেবো।
কিন্তু তোকে থামতে দিব না।”

পরবর্তী এক সপ্তাহ সাইফুল নিজেকে আরো ভেঙে ফেলে কাজ করেন—দিনে গার্মেন্টসে ডিউটি, রাতে গুদামে প্যাকেট টানার কাজ।
কিন্তু কেউ বোঝে না, তার হাঁটুতে সমস্যা হচ্ছে, চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।
একদিন রাতে হালিমা বলেন,
“তুমি এমন করে নিজেকে শেষ করে ফেলতেছো।”
সাইফুল বলেন,
“আল্লাহ আমাকে তৈরি করেছেন দেয়ার জন্য। আমি পাবার জন্য না।”

সপ্তাহের শেষে, আফরোজা স্কুল থেকে ফিরে আসে হাতে একটা সার্টিফিকেট নিয়ে—
“সেরা শিক্ষার্থী, ২০২৫।”
সে বাবার গলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।
“বাবা, এটা তোমার জন্য।”

❝ যে কষ্টে জন্ম নেয় একটা হাসি, সে কষ্টটাই হয়তো জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। একটা সার্টিফিকেটে শুধু লেখা ছিল নাম, কিন্তু তাতে ছিল বাবার ঘামের গল্প। ❞

সেই রাতে সাইফুল মুসাফিরদের মতো অজু করে একাকী মসজিদে বসেন।
চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
“আল্লাহ, তুই দেখেছিস।
তোর বান্দা যেন শুধু তোকে জানে।
আমার কিছু না হোক, ও যেন ভালো থাকে।”

জীবন কখনো গল্প হয় না।
তবু কিছু গল্প লেখা হয় চোখের জলে।

সাইফুল ইসলাম কোনো বিখ্যাত মানুষ না।
কিন্তু সে একজন বাবা
একজন মুসলিম বাবা,
যে প্রতিদিন নিজের কষ্ট লুকিয়ে মেয়ের মুখে হাসি খোঁজে।
এবং ক্লান্ত হলেও, কাঁদলেও,
সে কখনও থামে না।

— আজ আমি ক্লান্ত।

 

 

 

 

                              [দার্শনিক কবি ] 

 

                              [ Premer Pata ]

    

# প্রেমের পাতা: ভালোবাসার গল্প, বিরহ ও হৃদয়ের কাব্য

## ১. সম্পর্কের শুরু – যখন চোখে চোখ পড়ে

প্রথম প্রেমের অনুভব যেমন হয় – অচেনা অথচ চেনা লাগা…

## ২. ভালোবাসা বাড়ে – কিন্তু সঙ্গে আসে দূরত্ব

সব সম্পর্কেই আসে একটা সময়, যখন মনের দূরত্ব শুরু হয়।

## ৩. ভুল বোঝাবুঝি ও বিষণ্ণতা

তুচ্ছ বিষয়ে ভুল বোঝাবুঝি, আবেগের ওঠানামা সম্পর্ককে দোলায়।

## ৪. প্রেম টিকে থাকুক – কিছু পরাম

 

 
📢 [কমেন্টে বলুন] – আপনার প্রেমের গল্প কেমন ছিল?

 

 

 


 

 

 

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ছাদ থেকে ঝরে পড়া চিঠি – পর্ব ১: নীরবতার দিকে লেখা প্রথম চিঠি

প্রেমের পাতা: ভালোবাসা, বিরহ ও হৃদয়ের কাব্য (২০২৫ ব্লগ)" মন ভোলানো একটা গল্প